অন্তরে ভালোবাসার মহাসাগর তৈরি করুন, এটাই ইমানের প্রকৃত সৌন্দর্য

মোহাম্মদ আনিসুর রহমান সোহাগঃ  

মানুষের হৃদয় এমন এক অনুভূতির গভীরে পৌঁছাতে সক্ষম, যেখানে ভালোবাসার মহাসাগর তৈরি হয়। এই ভালোবাসা অন্যকে বুঝতে শেখায়, ক্ষমাশীল হতে উদ্বুদ্ধ করে। আসুন, আমরা ভাবি, অন্তরে অপরের জন্য ভালোবাসা তৈরি করা কেন গুরুত্বপূর্ণ। আমরা মানুষ হিসেবে বারবার কষ্ট পাই, ক্ষোভ জমাই, তবে কেবলই কি ঘৃণা জমিয়ে রাখাই আমাদের ভবিতব্য?

আসলে, মুমিনের হৃদয়ে ঘৃণার স্থান নেই। নবী করিম (সা.) আমাদের শিখিয়েছেন, ক্ষমা করার এবং মানুষের পক্ষে সুন্দর দৃষ্টান্ত স্থাপন করার মহান শিক্ষা। তিনি সেই মহৎ আদর্শ রেখে গেছেন, যেখানে একজন মুমিন তার ভাইয়ের জন্য আগুন থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য যেমন উৎকণ্ঠিত থাকে, তেমনই জাহান্নাম থেকে মুক্তির জন্য তার জন্য দোয়া করে। এভাবেই মুসলমানিত্বের মানে শুধু ইবাদতে সীমাবদ্ধ নয়, বরং অন্তরের পবিত্রতা ও হৃদয়ের উদারতায় প্রসারিত।

ভালোবাসার এই মহাসাগর তৈরি করতে হলে প্রথমে নিজেকে জানতে হবে। আমাদের আত্মার গভীরে কি লুকিয়ে আছে? আমরা কি অহংকারে ভুগছি? আত্মগৌরব কি আমাদের নেক আমলগুলোকে ম্লান করে দিচ্ছে? ইসলামের শিক্ষা হল নিজেকে সর্বপ্রথম সংশোধন করা। আত্মার পবিত্রতা অর্জন করাই হচ্ছে আসল সাধনা। যদি আমরা আল্লাহর জন্য মানুষকে ভালোবাসতে পারি, তাহলে সেই ভালোবাসা আমাদের ইবাদতের মধ্যে প্রতিফলিত হবে। প্রতিটি মানুষকে আমরা জান্নাতের পথে এগিয়ে দিতে চাইবো। জান্নাতের প্রতি আমাদের তৃষ্ণা যেমন দৃঢ়, তেমনই অন্যকে জান্নাতের পথ দেখানোর আন্তরিক চেষ্টা থাকবে।

অহংকার ও ঘৃণার শেকড় যত গভীরেই হোক, আল্লাহর দিকে ফিরে তাকালে সেই শেকড় উপড়ে ফেলা যায়। একজন মানুষ যখন তার অন্তরের আলো দিয়ে অন্যকে আলোকিত করার চেষ্টা করে, তখন সে নিজেও প্রশান্তিতে ভরে ওঠে। স্রষ্টার ভালোবাসা যার হৃদয়ে ছড়িয়ে পড়ে, সে জানে মানুষকে ক্ষমা করাই আল্লাহর প্রিয় একটি গুণ। এজন্য আল্লাহ আমাদের অন্তরকে সংবেদনশীল করেছেন।

এখন আমরা দেখি, ভালোবাসা ও ক্ষমার মহিমা কীভাবে আমাদের জীবনকে বদলে দিতে পারে। নবী করিম (সা.) বলেছেন, “তোমরা যদি পরস্পরকে ভালো না বাসো, তবে জান্নাতে যেতে পারবে না।” চিন্তা করুন, এই ছোট্ট বাক্যের কত গভীরতা রয়েছে। আমাদের জীবন তখনই সুন্দর হয়, যখন আমরা ঘৃণার বাঁধন থেকে মুক্ত হয়ে ভালোবাসার অমৃত গ্রহণ করি। জাহান্নামের আগুন থেকে যেমন আমরা বাঁচতে চাই, তেমনই আমাদের দায়িত্ব, অন্যকেও সেই আগুন থেকে বাঁচানোর চেষ্টা করা।

তাহলে কীভাবে আমরা এই ভালোবাসার মহাসাগর তৈরি করতে পারি? প্রথমেই আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতে হবে, তিনি যেন আমাদের অন্তর পবিত্র করেন। এরপর আমাদের দায়িত্ব হল, মানুষকে জান্নাতের পথে আহ্বান করা, তাদের জন্য আল্লাহর নিকট দোয়া করা। আমরা যখন ভালোবাসার মাধ্যমে মানুষকে ইসলামের পথে আহ্বান করি, তখন তা মানুষের হৃদয় স্পর্শ করে।

এই ভালোবাসার সাথে যুক্ত আছে আরেকটি গুণ, তা হলো বিনয়। একজন প্রকৃত মুমিন বিনয়ের সাথে মানুষের সেবা করে। সে জানে, আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনই তার একমাত্র লক্ষ্য। তাই জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত সে আল্লাহর দিকে ফিরিয়ে দেয়। জীবনের ক্ষুদ্র আনন্দ বা বড় কষ্ট—সবকিছুতেই সে আল্লাহর স্মরণে প্রশান্তি লাভ করে।

অন্যদিকে, যারা নিজেদের অহংকারের শৃঙ্খলে আবদ্ধ করে রাখে, তারা কখনো প্রকৃত সুখ পায় না। আল্লাহর কাছে তারা হয়তো নামাজে দাঁড়ায়, কিন্তু অন্তর কলুষিত থাকে। তাদের ইবাদত থেকে বরকত চলে যায়। কারণ, একজন প্রকৃত মুমিনের জন্য ইবাদত মানে হলো বিনয় এবং ভালোবাসা। সে শুধু নিজের জন্য জান্নাত চায় না, বরং আশপাশের সবাইকে জান্নাতের পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে চায়।

ভালোবাসা ও দোয়ার মধ্য দিয়ে আমরা এমন এক জীবন গড়তে পারি, যেখানে সবাই আল্লাহর দয়ায় আশ্রিত হয়। আল্লাহর রহমত এত বিশাল যে, তার জান্নাতের দরজা সব মুমিনের জন্য উন্মুক্ত। তাই আসুন, আমরা মানুষের জন্য অন্তরের ভালোবাসার মহাসাগর তৈরি করি। আমাদের এই পথচলা শুধু ইহকালেই নয়, পরকালেও আমাদের শান্তি এনে দেবে।

 

Recommended