আপনার স্ত্রীকে ভালবাসুন: ইমানের এক অনন্য শিক্ষা

মোহাম্মদ আনিসুর রহমান সোহাগঃ

স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের ভিত্তি হলো ভালোবাসা, সম্মান, ও একে অপরের জন্য কল্যাণকামী হওয়া। রাসূল (সা.) আমাদের নারীদের প্রতি সদ্ব্যবহার করতে, তাদের সুরক্ষা ও মর্যাদা দিতে অসংখ্যবার বলেছেন। তাঁর শিক্ষাগুলো আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, পারিবারিক সম্পর্ক কেবল একটি সামাজিক বন্ধন নয়; বরং এটি আল্লাহর নির্দেশিত একটি ইবাদত।

আমাদের প্রিয় নবী (সা.) এমন এক সমাজে জন্মেছিলেন যেখানে নারীদের প্রতি ন্যায়বিচার ছিল একপ্রকার অবহেলিত। কিন্তু তাঁর মিষ্টি কথাগুলো ও উদাহরণ আমাদের শিখিয়েছে কীভাবে স্ত্রীর প্রতি স্নেহ, ভালোবাসা এবং করুণার আচরণ করতে হয়। যেমন, সহিহ বুখারি ও মুসলিমের হাদিসগুলো আমাদের এ কথাই স্মরণ করিয়ে দেয়। স্ত্রীদের প্রতি প্রেম ও যত্ন প্রদর্শনের মধ্যে এক অভাবনীয় পুরস্কার রয়েছে। কেননা, যে স্বামী তার স্ত্রীর জন্য কল্যাণকামী, সে নিজের জীবনেও প্রশান্তি ও সফলতা লাভ করে।

বিদায় হজ্বের ঐতিহাসিক ভাষণে নবী করিম (সা.) যে উপদেশ দিয়েছিলেন, তা ছিল এক মহৎ শিক্ষা। তিনি বলেছিলেন, “তোমাদের স্ত্রীর অধিকার রয়েছে যেমন তোমাদেরও রয়েছে। তাদেরকে ভালোভাবে দেখাশোনা করো।” এ কথাগুলো আমাদের প্রতিদিনের জীবনে অমূল্য শিক্ষার এক উপলব্ধি। সংসারের দায়িত্ব পালনের মাঝেও একজন স্বামীর অন্যতম দায়িত্ব হলো তার স্ত্রীকে ভালোবাসা ও তার প্রতি ন্যায় আচরণ করা।

কিন্তু কেবল হাদিস পাঠ করা যথেষ্ট নয়। আমাদের প্রতিটি হাদিসের আলোকে জীবন গঠন করতে হবে। স্ত্রীকে ভালোবাসার মানে শুধু তার জন্য অর্থ, খাদ্য, বা পোশাক-আশাক সরবরাহ করা নয়। বরং তাকে এমনভাবে দেখা যাতে সে মানসিক প্রশান্তি পায়। ছোট ছোট কথায় স্বীকৃতি, ভালোবাসার মিষ্টি ভাষা, এবং মধুর আচরণ এ সম্পর্ককে আরও গভীর করে তোলে। স্ত্রীকে মানসিক ও শারীরিক নিরাপত্তা প্রদান করতে হবে এবং তার সঙ্গে এমন আচরণ করতে হবে যা তার আত্মসম্মানবোধ বজায় রাখে।

ইসলামে নারীর মর্যাদা অত্যন্ত উচ্চ। একটি স্ত্রী যেমন সংসারের সৌন্দর্য বাড়ায়, ঠিক তেমনই সংসারের প্রতিটি সুখে দুঃখে সে একজন সতীর্থ হয়ে থাকে। নবীজি (সা.) আমাদের বলেছেন, যে স্বামী তার স্ত্রীর প্রতি উত্তম আচরণ করে, সে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করে। উদারতা, সহমর্মিতা, এবং তার জন্য দোয়া করা—এগুলোই একজন ভালো স্বামীর পরিচায়ক।

পারিবারিক বন্ধনকে আল্লাহর নির্দেশিত ইবাদত হিসেবে ভাবতে হবে। স্বামী-স্ত্রীর ভালোবাসা যখন পারস্পরিক সম্মান ও দ্বীনের আলোকে পরিচালিত হয়, তখন এই সম্পর্ক একটি পবিত্র বন্ধনে পরিণত হয়। শুধু সামাজিক দায়িত্ব পালন নয়, বরং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য এই সম্পর্ককে আরও মধুর করতে হবে।

অতএব, ভালোবাসা ও ইমানের আলোকে গড়ে তোলা এই সম্পর্ক একটি জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান আর্শীবাদ। আল্লাহ আমাদের সকলকে এই পবিত্র সম্পর্ক রক্ষা ও উন্নতির তৌফিক দান করুন।

Recommended