মোহাম্মদ আনিসুর রহমান সোহাগঃ
প্রিয় নবী মুহাম্মদ (সা.) এর মাধ্যমে মহান আল্লাহ আমাদের জীবন পরিচালনার জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা দিয়েছেন। সেই শিক্ষার আলোকে কিয়ামতের দিন তিন ধরনের মানুষ এমন আছে, যাদের সাথে আল্লাহ কথা বলবেন না, তাদের দিকে রহমতের দৃষ্টিতে তাকাবেন না এবং তাদেরকে ক্ষমা করবেন না। তাদের জন্য কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা রয়েছে। আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত একটি হাদিসে এই বিষয়ে আলোচনা এসেছে, যা আমাদের সতর্ক করে এবং আমাদের জীবনের প্রতিটি কাজেই সচেতন হওয়ার প্রয়োজনীয়তা মনে করিয়ে দেয়।
হাদিসের বর্ণনা
আবু হুরাইরা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘‘তিন ধরনের লোক এমন আছে, যাদের সাথে কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা’আলা কথা বলবেন না, তাদের দিকে (রহমতের দৃষ্টিতে) তাকাবেন না এবং তাদেরকে পবিত্র করবেন না; বরং তাদের জন্য কঠিন শাস্তি নির্ধারিত রয়েছে।’’ তখন আবু হুরাইরা (রা.) বললেন, ‘‘হে আল্লাহর রাসুল, তারা কারা?’’ (মুসলিম, হাদিস: ২৯৪)
এই তিন শ্রেণির লোক কারা এবং তারা কোন কাজগুলো করেন যার ফলে তারা আল্লাহর এই অসন্তুষ্টি অর্জন করেন, চলুন তা আলোচনা করি।
তিন ধরনের ব্যক্তির অপরাধ
১. অহংকারী ব্যক্তি, যারা গর্বের সাথে পোশাক টেনে হাঁটে
এ শ্রেণির মানুষ নিজেদের গৌরব ও অহংকার প্রদর্শনের জন্য তাদের পোশাক মাটিতে টেনে টেনে হাঁটে। এ ধরনের আচরণে তারা নিজের মধ্যে একটা “বড়ত্ব” ও অহংকার প্রদর্শন করেন, যা আল্লাহর কাছে অত্যন্ত অপছন্দনীয়। ইসলাম বিনয় ও নম্রতাকে খুবই গুরুত্ব দেয় এবং অহংকারকে একটি মারাত্মক পাপ হিসেবে গণ্য করে। অহংকার মানুষকে আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য করে তোলে না, বরং দূরে ঠেলে দেয়। আল্লাহ বলেছেন, ‘‘নিশ্চয়ই আল্লাহ অহংকারকারীদের পছন্দ করেন না।’’ (সূরা লুকমান, আয়াত ১৮)
২. ব্যবসায়ী, যারা মিথ্যা শপথ করে বিক্রি করে
এই শ্রেণির মানুষ ব্যবসার ক্ষেত্রে মিথ্যা কসম খেয়ে পণ্য বিক্রির মাধ্যমে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে। তারা আল্লাহর নামে মিথ্যা শপথ করে তাদের ব্যবসা চালায়, যা ইসলামে খুবই ঘৃণিত কাজ। এ ধরনের মিথ্যা প্রতারণা শুধুমাত্র ব্যবসায়ে নয়, বরং সমাজেও বিভ্রান্তির সৃষ্টি করে এবং মানুষের বিশ্বাস ভঙ্গ করে। আল্লাহ বলেন, ‘‘আল্লাহ মিথ্যাবাদী এবং প্রবঞ্চকদের পছন্দ করেন না।’’ (সূরা নিসা, আয়াত ৩৬)
৩. মিথ্যা প্রতিশ্রুতির অপব্যবহারকারী
এ শ্রেণির মানুষ কথার খেলাপ করে। তারা এমন প্রতিশ্রুতি দেয় যা পূরণ করে না, ফলে অন্যদের মধ্যে হতাশা ও ক্ষোভের জন্ম দেয়। ইসলাম সততা ও বিশ্বাসের ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে, তাই এই ধরনের আচরণ ইসলামে অগ্রহণযোগ্য। আল্লাহ বলেন, ‘‘প্রতিশ্রুতি পূরণ করো, অবশ্যই প্রতিশ্রুতি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে।’’ (সূরা আল-ইসরা, আয়াত ৩৪) এ ধরনের মিথ্যাচার একদিকে অন্যের বিশ্বাস ভঙ্গ করে, অন্যদিকে আল্লাহর রহমত থেকে দূরে ঠেলে দেয়।
কেন আল্লাহ তাদের সাথে কথা বলবেন না?
কিয়ামতের দিন আল্লাহ যখন আমাদের সামনে উপস্থিত হবেন, তখন তার সাথে কথা বলা বা তার দিকে রহমতের দৃষ্টিতে তাকানোর মতো সৌভাগ্য একটি বিরল এবং মহামূল্যবান বিষয় হবে। কিন্তু এই তিন ধরনের মানুষ সেই সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবে, কারণ তাদের অপরাধ আল্লাহর কাছে খুবই অপছন্দনীয় এবং তারা এই দুর্দশার মধ্যে পড়বেন তাদের অপরাধের জন্য। আল্লাহর সাথে কথা বলার এবং তার রহমতের দৃষ্টি অর্জন করতে না পারার ফলে তাদের ওপর একটি চরম শাস্তি নির্ধারিত হবে, যা তাদের জীবনের চূড়ান্ত দুর্ভাগ্য বলে বিবেচিত হবে।
আমাদের করণীয়
এই হাদিসটি আমাদের জন্য একটি সতর্কবার্তা, যেন আমরা এই ধরনের আচরণ থেকে নিজেদের দূরে রাখি। অহংকার, প্রতারণা, এবং মিথ্যাচার ইসলামে গর্হিত কাজ, যা একজন মুমিনের ব্যক্তিত্বের সঙ্গে যায় না। আমাদের প্রতিটি কাজের মধ্যেই বিনয়, সততা, এবং সতর্কতার প্রয়োজন।
পরিশেষে
কিয়ামতের দিন আল্লাহর রহমত এবং তার সান্নিধ্য লাভ করার সৌভাগ্য অর্জন করতে আমাদের জীবনকে আল্লাহর নির্দেশনা ও রাসুলুল্লাহ (সা.) এর শিক্ষার ওপর ভিত্তি করে গড়ে তোলা প্রয়োজন। আল্লাহ আমাদের সবাইকে এই গর্হিত কাজ থেকে রক্ষা করুন এবং আমাদের জীবনে সততা, বিনয় এবং আল্লাহর প্রতি দৃঢ় বিশ্বাসের মাধ্যমে কিয়ামতের দিন তার সন্তুষ্টি অর্জন করার তাওফিক দান করুন।