মোহাম্মদ আনিসুর রহমান সোহাগঃ
যৌবনকাল হলো মানুষের জীবনের সবচেয়ে শক্তিশালী, চাঞ্চল্যপূর্ণ এবং প্রেরণাদায়ক সময়। এ সময় মানুষ যে উদ্যম, আশা আর ক্ষমতা নিয়ে জীবনযাপন করে, তা আর কোনো সময় থাকে না। ইসলামে এই যৌবনকালকে আল্লাহর বিশেষ নিয়ামত হিসেবে দেখা হয়, এবং এই সময়ের সঠিক ব্যবহার আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের এক বড় উপায়। যৌবন শুধুমাত্র বন্ধুদের সাথে আড্ডা, আনন্দ কিংবা খেলার জন্য নয়; বরং আল্লাহর ইবাদতে মনোনিবেশ করে জীবন গড়ে তুলতে এটি এক গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ।
আমাদের নবী মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, “যেদিন আল্লাহর রহমতের ছায়া ছাড়া আর কোনো ছায়া থাকবে না, সেদিন সাত ধরনের মানুষকে আল্লাহ তাঁর ছায়ায় আশ্রয় দেবেন। তাদের মধ্যে অন্যতম হল সেই যুবক, যার যৌবন কাটে আল্লাহর ইবাদতে।” (বুখারি, হাদিস ৬৬০)।
কেন আল্লাহর কাছে যৌবনের ইবাদত এত প্রিয়?
আল্লাহ আমাদের জীবনকে পরীক্ষা করার জন্য যৌবনের এই বিশেষ সময় দিয়েছেন, যাতে আমরা এই শক্তি, ক্ষমতা ও উদ্দীপনার মধ্যে তাঁর নির্দেশ পালন করতে পারি। এই সময়টিতে বিভিন্ন প্রলোভন এবং বাধা আসতে পারে, যা আমাদের আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত করতে পারে। তবুও যারা আল্লাহর জন্য এই সময়টাকে ইবাদতে ব্যয় করেন, তারা প্রকৃত সফল।
আল্লাহ তাআলা কুরআনে বলেন, “যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করে এবং পাপ থেকে বিরত থাকে, আল্লাহ তাকে সম্মানিত করবেন।” এই কথা স্মরণ রেখে যারা প্রলোভন থেকে নিজেদের দূরে রেখে আল্লাহর ইবাদতে মনোনিবেশ করেন, তাদের জন্য রয়েছে বিশেষ মর্যাদা।
যৌবনের ইবাদতের সাথে আল্লাহর সান্নিধ্য লাভ
যৌবনের ইবাদত শুধু শারীরিক নয়, এটি এক ধরনের আত্মিক চর্চা। ইসলামে ইবাদত কেবল নামাজ, রোজা কিংবা কুরআন পড়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। ইবাদত হলো আমাদের জীবনের প্রতিটি কর্ম, যা আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে করা হয়। সৎ কাজ করা, অন্যদের সহায়তা করা, সত্যবাদিতা ও পরোপকার করা—এসবই ইবাদতের অন্তর্ভুক্ত। একজন যুবক বা যুবতী যখন তাদের জীবনের প্রতিটি দিককে আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে পরিচালিত করে, তখন সেটি আল্লাহর কাছে বিশেষভাবে প্রিয় হয়।
বিজ্ঞানভিত্তিক দৃষ্টিকোণে ইবাদতের গুরুত্ব
বিজ্ঞানও প্রমাণ করেছে যে ইবাদত এবং আল্লাহর স্মরণ মানুষের মন ও শরীরকে সুস্থ রাখে। ইবাদত মানসিক চাপ কমায়, আত্মবিশ্বাস বাড়ায়, এবং মানসিক প্রশান্তি প্রদান করে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, যারা নিয়মিত ইবাদত করেন তাদের মধ্যে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি থাকে। আল্লাহর স্মরণ আমাদের মস্তিষ্কে এক ধরনের প্রশান্তি এনে দেয়, যা মানসিক স্বাস্থ্য উন্নত করে।
সমাজে ইবাদতের প্রভাব
যৌবনে ইবাদত করা শুধুমাত্র ব্যক্তিগত উন্নতির জন্য নয়; বরং এটি সমাজে একটি ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। ইবাদতে মগ্ন যুবকেরা তাদের চরিত্র ও আচার-আচরণ দ্বারা সমাজে অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে ওঠে। তারা পরিবার ও সমাজে ন্যায়বিচার ও মানবিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করে। যারা আল্লাহর ইবাদতে নিজেকে সমর্পণ করেন, তারা পাপ থেকে দূরে থাকেন এবং অন্যদেরকেও সঠিক পথে চলতে সাহায্য করেন। এভাবে তারা সমাজকে উন্নত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
কিভাবে যৌবনে ইবাদতের অভ্যাস গড়ে তোলা যায়
১. নিয়মিত নামাজ আদায়: নামাজ হলো আল্লাহর সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যম। এটি মনকে প্রশান্ত রাখে এবং আল্লাহর রহমত লাভের পথ তৈরি করে।
২. কুরআন তেলাওয়াত: প্রতিদিন কুরআন তেলাওয়াত আমাদের আত্মাকে শুদ্ধ করে এবং আল্লাহর নির্দেশ মেনে চলার দিকনির্দেশনা দেয়।
৩. ইসলামী শিক্ষাগ্রহণ: ইসলামিক জ্ঞান এবং হাদিসের শিক্ষাগুলো অনুসরণ করে আল্লাহর পথে চলার শক্তি অর্জন করা সম্ভব।
৪. সৎ সঙ্গ বজায় রাখা: ভালো সঙ্গী মানুষের ইমান বাড়ায় এবং আল্লাহর পথে থাকতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
৫. নফল রোজা রাখা: রোজা রাখা আত্মাকে পাপ থেকে রক্ষা করে এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে সহায়ক।
পরিশেষে
যৌবন হলো আল্লাহর কাছে প্রিয় এবং মূল্যবান একটি সময়, যা আমাদের জীবনের এক পরীক্ষা হিসেবে এসেছে। যারা এই সময়কে ইবাদতের মাধ্যমে কাটায়, তারা পৃথিবীতেও প্রশান্তি লাভ করে এবং আখিরাতে বিশেষ মর্যাদার অধিকারী হবে। যৌবনের এই সময়কালে আল্লাহর ইবাদতে মগ্ন হওয়া এক ধরনের আত্মিক পরিতৃপ্তি এনে দেয় এবং আখিরাতের জন্য সুসংবাদ বয়ে আনে। যৌবনের ইবাদত আমাদেরকে আল্লাহর সান্নিধ্যে নিয়ে যায় এবং সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনে।
আমাদের যৌবনকে ইবাদতে ব্যয় করা আসলেই এক বিশেষ নেয়ামত। যারা আল্লাহর পথে নিজেদের উৎসর্গ করেন, তারা আল্লাহর কাছেই অনুগ্রহপ্রাপ্ত হন।