ঘুমের প্রয়োজনীয়তা এবং জীবনের সফলতার সাথে এর সম্পর্ক

মোহাম্মদ আনিসুর রহমান সোহাগঃ

আমাদের প্রতিদিনের ব্যস্ততার শেষে শরীর ও মনকে বিশ্রাম দিতে ঘুমের কোনো বিকল্প নেই। সারাদিনের কাজকর্ম শেষে একটি গভীর এবং নির্দিষ্ট সময়ের ঘুম আমাদের শরীর ও মনকে নতুন উদ্যমে শুরু করার জন্য প্রস্তুত করে। ঘুম শরীরের ক্লান্তি দূর করে, মানসিক চাপ কমায় এবং আমাদের মস্তিষ্ককে পুনরায় চার্জ করে দেয়।

বিজ্ঞান বলছে, ঘুম কেবল শরীরের জন্যই নয়, মানসিক স্বাস্থ্য এবং সামাজিক জীবনযাপনের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। যারা প্রতিদিন পর্যাপ্ত ঘুমান তারা কেবল শারীরিকভাবে সুস্থ থাকেন না, বরং তাদের মনোযোগ, কর্মক্ষমতা, এবং মনের প্রশান্তিও বজায় থাকে। রাতের ঘুম ঠিকমতো না হলে অনেকেই সকালে উঠে ক্লান্ত এবং অবসাদগ্রস্ত অনুভব করেন, কাজে মন বসাতে পারেন না, আর মেজাজ খিটখিটে থাকে। এই বিষয়গুলো সরাসরি তাদের ব্যক্তিগত এবং পেশাগত জীবনে প্রভাব ফেলে।

তবে ব্যস্ত জীবন, দুশ্চিন্তা, এবং বিভিন্ন মানসিক চাপের কারণে ঘুমে সমস্যা হওয়াটা আজকাল খুবই স্বাভাবিক। অনেকেই রাতে ঘুম আসার জন্য ঘুমের ঔষধ গ্রহণ করেন, কিন্তু এর মাধ্যমে সত্যিকারের গভীর ঘুম পাওয়া সম্ভব নয়। এই ধরনের ঘুম আমাদের শরীর এবং মনকে পুনরুদ্ধার করতে অক্ষম থাকে। তাই ঘুমের ঔষধের বদলে প্রাকৃতিক উপায়ে ঘুমানোর চেষ্টা করাই ভালো।

বয়স অনুযায়ী ঘুমের প্রয়োজনীয়তা

আমাদের বয়সের সাথে ঘুমের চাহিদা পরিবর্তিত হয়। যেমন:

  1. নবজাতক (০-১ বছর): এই বয়সে শিশুদের প্রতিদিন প্রায় ১২-১৬ ঘণ্টা ঘুমের প্রয়োজন হয়। এ ঘুম তাদের শরীর ও মনের বিকাশে অত্যন্ত সহায়ক।
  2. ৩-৫ বছর বয়স: এই বয়সের শিশুরা ১০-১৩ ঘণ্টা ঘুমায়। ঘুম তাদের শরীর এবং মস্তিষ্কের বিকাশে সহায়তা করে।
  3. ৬-১২ বছর বয়স: স্কুলগামী শিশুদের প্রতিদিন ৯-১১ ঘণ্টা ঘুমানো উচিত। এটি তাদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশে সাহায্য করে এবং স্কুলের পড়াশোনায় মনোযোগ ধরে রাখতে সহায়তা করে।
  4. ১২-১৮ বছর বয়স: এই বয়সে কিশোরদের জন্য প্রতিদিন ৮-১০ ঘণ্টা ঘুমের প্রয়োজন। এসময় শরীর ও মনের দ্রুত বিকাশ ঘটে, তাই পর্যাপ্ত ঘুম তাদের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
  5. ১৮ বছর এবং তদূর্ধ্ব বয়স: প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য সাধারণত ৬-৮ ঘণ্টা ঘুম যথেষ্ট। এ ঘুম তাদের শারীরিক ও মানসিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সহায়ক।

সফলতার সাথে ঘুমের সম্পর্ক

ঘুম আমাদের কর্মক্ষমতা এবং সিদ্ধান্তগ্রহণের দক্ষতার সাথে সরাসরি সম্পর্কিত। যদি আমরা পর্যাপ্ত ঘুম না পাই, তাহলে মনোযোগ কমে যায়, ভুল সিদ্ধান্ত নেয়ার প্রবণতা বেড়ে যায় এবং মানসিক চাপ বাড়ে। অন্যদিকে, যারা নিয়মিত পর্যাপ্ত ঘুমান তারা আরও কর্মক্ষম, মনোযোগী এবং মানসিক চাপ কম অনুভব করেন।

আমাদের জীবনের সফলতার জন্য যে ফোকাস ও শক্তি প্রয়োজন, তার মূল ভিত্তি হলো একটি সুস্থ শরীর ও মন। আর এই শরীর ও মনের পুনর্জাগরণের অন্যতম প্রধান উপায় হচ্ছে ঘুম। তাই জীবনে সফলতা অর্জনে সঠিকভাবে ঘুমানোর গুরুত্বকে অবহেলা করা যাবে না।

 

 

 

Recommended